ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমান ফিডে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • 6

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঋণ নিয়ে নয়-ছয়ের কারনে দীর্ঘদিন ধরে ভালো ব্যবসা করে আসা আমান ফিড হঠাৎ নিচের দিকে ধাবিত। কোম্পানিটির ঋণ গ্রহন ও একই গ্রুপে সিমেন্ট কোম্পানিসহ কয়েকটি প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পর থেকেই ডুবতে বসেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে বিভিন্নভাবে অন্য প্রজেক্ট তা সরবরাহের মাধ্যমে বিপদে ফেলা হয়েছে আমান ফিডকে। যে কারনে কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে পর্যন্ত তোলার ঘোষণা দেয় ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংক। তবে আদালতের রায়ে তা আপাতত স্থগিত হয়। কিন্তু আমান ফিডের যে পরিমাণ মুনাফা হয়, তাতে এই ঋণ নেওয়ার এবং থাকার কথা না।

আমান ফিডের আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয়টি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি) দৃষ্টিগোচরে আসে। যে কারনে তারা কোম্পানিটির বিষয়াদি অনুসন্ধানে তদন্তে নামে। এছাড়া নিরীক্ষকের নিরীক্ষায়ও আমান ফিডের নানা আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয় উঠে এসেছে।

আমান ফিড থেকে চলে যাওয়া সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটির যে পরিমাণ বিক্রি ও মুনাফা হয়, তার অর্ধেকও যদি আর্থিক হিসাবে দেখানো যেতো, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভেসে যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা। যা সমন্বয় করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমান ফিডকে।

এরমধ্যে আবার কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে মাঝেমধ্যে কারসাজি করা হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উত্থান ঘটায়। যেখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন কোম্পানির পর্ষদের কয়েকজন।

ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারার কারনে সম্পত্তি নিলামে উঠার উপক্রম হওয়া আমান ফিড থেকেই আবার পরিচালকদের ব্যক্তিগত অন্য কোম্পানিতে ৩১.৭৫ কোটি টাকা দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সম্মতি নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা নেয়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

একই গ্রুপের আরেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান কটন ফাইব্রাসের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৮ সালে ৮০ কোটি উত্তোলন করে। অথচ এই কোম্পানিটি থেকেই সহযোগি কোম্পানিতে আবার ৫৩.৫০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নোটিফিকেশন নং বিএসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৩২/২/এডমিন/১০৩ অনুযায়ি প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন……
আমান কটনের প্রত্যেক পরিচালককে ৩ কোটি ও নিরীক্ষককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আমান ফিডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ৩৬.৫৪ শতাংশ। কোম্পানিটির রবিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫০ টাকায়।

বি:দ্র: পরের পর্বের নিউজগুলোতে থাকছে আমান ফিড ও আমান কটনের পর্ষদের খামখেয়ালি ও ফান্ড ছয়-নয়ের কারনে কিভাবে কোম্পানি দুটি ডুবতে বসেছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আমান ফিডে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঋণ নিয়ে নয়-ছয়ের কারনে দীর্ঘদিন ধরে ভালো ব্যবসা করে আসা আমান ফিড হঠাৎ নিচের দিকে ধাবিত। কোম্পানিটির ঋণ গ্রহন ও একই গ্রুপে সিমেন্ট কোম্পানিসহ কয়েকটি প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পর থেকেই ডুবতে বসেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে বিভিন্নভাবে অন্য প্রজেক্ট তা সরবরাহের মাধ্যমে বিপদে ফেলা হয়েছে আমান ফিডকে। যে কারনে কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে পর্যন্ত তোলার ঘোষণা দেয় ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংক। তবে আদালতের রায়ে তা আপাতত স্থগিত হয়। কিন্তু আমান ফিডের যে পরিমাণ মুনাফা হয়, তাতে এই ঋণ নেওয়ার এবং থাকার কথা না।

আমান ফিডের আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয়টি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি) দৃষ্টিগোচরে আসে। যে কারনে তারা কোম্পানিটির বিষয়াদি অনুসন্ধানে তদন্তে নামে। এছাড়া নিরীক্ষকের নিরীক্ষায়ও আমান ফিডের নানা আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয় উঠে এসেছে।

আমান ফিড থেকে চলে যাওয়া সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটির যে পরিমাণ বিক্রি ও মুনাফা হয়, তার অর্ধেকও যদি আর্থিক হিসাবে দেখানো যেতো, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভেসে যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা। যা সমন্বয় করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমান ফিডকে।

এরমধ্যে আবার কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে মাঝেমধ্যে কারসাজি করা হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উত্থান ঘটায়। যেখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন কোম্পানির পর্ষদের কয়েকজন।

ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারার কারনে সম্পত্তি নিলামে উঠার উপক্রম হওয়া আমান ফিড থেকেই আবার পরিচালকদের ব্যক্তিগত অন্য কোম্পানিতে ৩১.৭৫ কোটি টাকা দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সম্মতি নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা নেয়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

একই গ্রুপের আরেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান কটন ফাইব্রাসের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৮ সালে ৮০ কোটি উত্তোলন করে। অথচ এই কোম্পানিটি থেকেই সহযোগি কোম্পানিতে আবার ৫৩.৫০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নোটিফিকেশন নং বিএসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৩২/২/এডমিন/১০৩ অনুযায়ি প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন……
আমান কটনের প্রত্যেক পরিচালককে ৩ কোটি ও নিরীক্ষককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আমান ফিডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ৩৬.৫৪ শতাংশ। কোম্পানিটির রবিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫০ টাকায়।

বি:দ্র: পরের পর্বের নিউজগুলোতে থাকছে আমান ফিড ও আমান কটনের পর্ষদের খামখেয়ালি ও ফান্ড ছয়-নয়ের কারনে কিভাবে কোম্পানি দুটি ডুবতে বসেছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: